জনপ্রতিনিধি শূন্য থাকায় সংকট দেখা দেবে ভোটার তালিকা তৈরিতে
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রতিনিধি শূন্য থাকায় সারা দেশের ভোটার তালিকা হালনাগাদে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদে সমস্যা না হলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় সমস্যা হবে। নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে জন্মসনদ এবং মৃত ভোটারের নাম কর্তনের ক্ষেত্রে মৃত্যু সনদ প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ভোটার হালনাগাদের ক্ষেত্রে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচারণার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এক্ষেত্রে এবারের হালনাগাদে এই দুই সনদ নিতে নাগরিকদের ভোগান্তি পোহাতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ইসিকে যে সহযোগিতা করে; সেই সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হবে না। অন্যদিকে বর্তমানে যারা নতুন ভোটার হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটিসহ অন্যান্য সিটিতে নতুন ভোটার হতে অনেক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। অনেকের প্রশ্ন সারা দেশে হালনাগাদ শুরু হলে একই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক নাগরিককে জন্মমৃত্যুর সনদের বিষয়ে সেবা দেবে কারা?
এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করার কথা উঠেছে। এ জন্য কী পরিমাণ সরঞ্জাম আছে, কী পরিমাণ লাগবে তার হিসাব চেয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হয়েছে।
ইসি সচিব শফিউল আজিম লিখিত নির্দেশনায় বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোটার নিবন্ধন কাজে ব্যবহৃত মালামালের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য মাঠপর্যায়ে পত্র প্রেরণ করতে হবে ও প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
২০২২ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচির সময় দেওয়া হয়েছিল ৩ সপ্তাহ। তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিদ্যমান ভোটারের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কার্যক্রম শেষে তথ্য সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং নিবন্ধন হয় ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ৩ বছরে তথ্য আগাম নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এবারও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
আবেদনের পর ছবি তোলার তারিখ খুদে বার্তায় : নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কেউ আবেদন করলে এখন থেকে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় ও তারিখ মোবাইলে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের জন্য ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে সব নাগরিক ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনসমূহ অ্যাপয়েনমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে এসএমএসের মাধ্যমে ছবিসহ বায়োমেট্রিক গ্রহণের সময় ও তারিখ জানিয়ে দিয়ে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কার্যদিবসের ছবি তুলে ৩ দিনের মধ্যে ডেটা আপলোড করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলা-থানা নির্বাচন অফিস হতে ভোটার নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) যথাযথভাবে আপলোড করতে হবে। ভোটাররা ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ এ যথাযথ তথ্য প্রদান সত্ত্বেও ডেটাএন্ট্রি অপারেটরদের এন্ট্রিজনিত ভুল হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে ডেটাএন্ট্রির কাজ করতে হবে। এ জাতীয় ভুলের কারণে আবেদন ফি ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য সংশোধন আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটারদের ভোটার নিবন্ধন ফরম-২ স্ক্যানিং অ্যান্ড ইকুয়েপমেন্ট অপারেটররা চলমান রাখবে। পরবর্তীতে আইডিইএ প্রকল্প (২য় পর্যায়) হতে সফটওয়্যার সংস্থান করা সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় সার্ভারে আপলোড করতে হবে।