আসসালামু আলাইকুম, আজকের পোস্টটি আমার সেই সব ভাই ব্রাদারদের জন্য যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার চিন্তা করছেন। বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। কিভাবে শুরু করতে হবে এর একটি গাইডলাইন প্রয়োজন, তাদের জন্য এই পোস্ট। অনুগ্রহ করে পড়ুন ধীর স্থিরে আর চিন্তা করুন নিজেকে নিয়ে। টাইলে পড়েই মি — ষাড়ের কোর্স করতে শুরু করবেন না।
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে প্রথমেই জেনে নেয়া উচিত, শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর উপর কোন কোর্স হয় না। হলেও সেটা করার ১% দরকার নাই। কোর্স করতে হবে কোন একটি বিশেষ স্কীল এর উপর। স্কীল ডেভেলাপমেন্ট কোর্স করে সেটা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হবে। যেমন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলাপমেন্ট ইত্যাদি
প্রথমেই বলে রাখি। যদি দ্রুতই সফল হতে চান তবে সফলতা ভুলে যেতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এর কোন সর্টকাট নেই। কোর্স করেই টাকা আসতে শুরু করবে এই চিন্তা মাথায় থাকলে টাকা আয় করার সম্ভাবনা প্রায় নাই। আপনার যা করতে হবে তা হল – এমন একটা বিষয়ে স্কীল অর্জন করতে হবে যাতে আপনি আপনার সবটুকু দিতে পারবেন। আপনি যা শিখলেন তার উপর অনেকগুলো কাজের ডেমো তৈরি করতে হবে যেন কেউ দেখতে চাইলেই দেখাতে পারেন। তাহলে আশা করা যায় এই স্কীল অর্জন করে আপনি সফল হবেন নিশ্চিন্তেই।
ফ্রিল্যান্সিং করেই কি লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়?
হ্যা যায়। তবে এটা আপনার জন্য নয়। ঐ অবস্থায় আসতে হলে আপনাকে দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দিতে হবে। কোর্স করেই সেটা সম্ভব না। আবার কারও কারও জন্য সেটা সম্ভব হতেও পারে। এটা নির্ভর করে যে স্কীলটা আপনি শিখছেন সেটা আপনি কতটা শিখতে পেরেছেন তার উপর। শিখে আপনি কতটা প্রয়োগ করতে পেরেছেন তার উপর। একটা ক্লাসে একই বই পড়ে একই টিচারের কোর্স করে সবাই কিন্তু ১নং ছাত্র হিসাবে পাশ করতে পারে না। যে যতটা যোগ্যতা অর্জন করেছে তার উপর নির্ভর করে সে কতটা ভালো প্রয়োগ করতে পারবে। শুধু সারা বছর ভাল পড়লেন কিন্তু পরীক্ষায় লিখতে পারলেন না। তাহলে কী হবে? যদি আপনি কাজ শিখলেন কিন্তু বায়ারের সাথে কথা বলতে পারলেন না ঠিকমতো। ক্লায়েন্টকে আপনি আপনার সাথে কানেক্ট করতে পারলেন না, তাহলে সেই অবস্থা হবে যে ছাত্র ভাল কিন্তু পরীক্ষায় লিখতে পারল না।
কেউ কেউ তো ১০০% আয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে –
ডিমান্ডএবল স্কীল – ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলাপমেন্ট
মনে রাখবেন, ১০০% আয়ের নিশ্চয়তা একটা ফাদ। এই ফাদে পা দিবেন না। আমি যে স্কীলগুলো কথা বললাম তা অর্জন করে ইউটিউবে দেখুন সেই কাজগুলোর মাধ্যমে কিভাবে আরও বেশী আয় করা যাবে। আপনার স্কীলের উপর ব্লগগুলো পড়ুন। আপনি আয় করতে পারবেন কোন প্রকার ১০০% আয়ের নিশ্চয়তা ছাড়াই।
শিখতে হবে প্রচুর – এখন পর্যন্ত আমাকে নিজের স্কীল বাড়ানোর জন্য সিনিয়রদের পরামর্শ ও নতুন নতুন কোর্স করতে। ২০০৬ সাল থেকে আমি এই সেক্টরে শুরু করেছিলাম। আজও শিখছি। আমি পরবর্তী যে কোর্সের জন্য নিজেকে তৈরি করছি তার কোর্স ফি বাংলাদেশের টাকায় আড়াই লক্ষ টাকা। তাহলে আপনি এবার অনুমান করুন আপনাকে কি পরিমাণ শেখার ধৈর্য্য নিয়ে আসতে হবে।
আপনি যদি এই সেক্টরে ঠিকে থাকতে চান তবে ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে শুরু করুন। গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং অ্যানিমেশনের মতো স্কীলগুলো একজন ডিজিটাল মার্কেটারের জন্য খুবই হেল্পফুল। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে কিছু টাকা আয় করে সেই টাকা দিয়ে আপনি আরও বড় কোর্স করুন সেখানে আপনার আগ্রহ রয়েছে।
প্রথমেই যা শিখতে হবে তা হল সার্চ দিয়ে খুজে বের করা শিখতে হবে। গুগলে, ইউটিউবে সার্চ দিলেই তো সব পাওয়া যায়। কিন্তু আপনাকে এসব ভিডিও আরও বেশী ব্যার্থ করবে। দেখে মনে হবে, শুরু করলেই টাকা আসতে শুরু করবে। কিন্তু মনে রাখবেন তারা এসব ভিডিও বানায় শুধু ভিউ বাড়ানোর জন্য। তাই এগুলোতে সফল হওয়ার চান্স খুবই কম। কিন্তু এগুলোর মধ্যেও এমন কিছু ভিডিও আছে যা দেখলে আপনার সত্যিই উপকার হবে। সেই সব ভিডিও খুজে বের করতে পারার মতো সার্চ এবিলিটি তৈরি করতে হবে।
অনলাইনে বিজনেস – এমন কিছু মেথড রয়েছে যার সাহায্যে অনলাইনে বিজনেস করে আয় করতে পারবেন। মনে রাখবেন, অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং আর অনলাইনে বিজনেস দুটি আলাদা জিনিস। তাই অনলাইনে এমন কিছু বিজনেস শুরু করতে পারেন যা দিয়ে আপনি টাকা আয় করেন। উদাহরণ স্বরুপ- ইকমার্স প্লাটফরমের মধ্যে ক্লাসিফাইড বাইসেল ওয়েবসাইট, ইকমার্স ওয়েবসাইট ইত্যাদি
অনলাইনে আয় করা কিন্তু কঠিন নয়। যদি আপনার ইনোভেটিব একটি আইডিয়া থাকে। খুবই প্রফেশনাল হতে পারেন আপনি যে কোর্স করেছেন বা যা জানেন তার উপর আপনার অর্জন যদি হাইলী প্রফেশনাল হয় তবে কাজ করতে পারবেন। তাই হতাশ হবেন না। অমুক ষাড় তমুক ষাড়ের কাছে না গিয়ে প্রথমে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে সার্চ দিন, ইউটিউবে সার্চ দিন। ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন এগুলো সার্চ দিয়ে দেখুন। দেখতে থাকুন আর চিন্তা করতে থাকুন। হুট করে চাকরী ছেড়ে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করেই আয় করতে থাকবেন এমন সীদ্ধান্ত নিতে যাবেন না।
শেষকথা- উপরের আলোচনার সারাংশ হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে যদি কোন কোর্স করতে হয় তবে সেটা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স। এই কোর্স করেই টাকা আয় করতে থাকবেন এমন নয়। এই কোর্সের পর আপনাকে কাজ পাওয়ার জন্য প্রচুর ডেমো তৈরি করতে হবে। ক্লায়েন্টকে কিভাবে আপনার সাথে কানেক্ট করতে পারেন সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য প্রচুর সার্চ করার এবং শেখার মানষিকতা থাকতে হবে। সঠিক কীওয়ার্ড সার্চ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।