অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট

অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট – বেসিক আলোচনা

স্মার্ট ফোনে আমরা যেসব অ্যাপস ব্যবহার করে থাকি তা তৈরি করার প্রক্রিয়াকে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট বলা হয়। বর্তমানে আমাদের প্রায় সবার হাতেই অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এর স্মার্ট ফোন রয়েছে। যে ফোনগুলো বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় আর ব্যবহারের দিক দিয়েও অন্য সকল চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সকল ফোনে আমরা বিভিন্ন রকমের অ্যাপস দেখতে পাই। প্রচুর পরিমাণে অ্যাপস এসব স্মার্টফোনগুলোর জন্য তৈরি হচ্ছে আর তাই এসব ফোনের জন্য অ্যাপস তৈরি করা বা অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট এর কাজ বর্তমানে খুবই যুগোপযোগী একটি কাজ। আজকে আমরা সে সম্পর্কে জানবো।

আরও পড়ুন >>> আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে গান তৈরি হচ্ছে

অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট – কি , কেন, কিভাবে ?

অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট হল এক ধরনের প্রোগ্রামিং স্কীল। যা সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে হলে প্রয়োজন হয়। বিশেষভাবে স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের মতো মোবাইল ডিভাইস এসব অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। আমরা মোবাইলে ইউটিউব, ফেইসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার বা এক্স (X) নামে যেসব অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি তাই হলো মোবাইল অ্যাপস। আর এই অ্যপসগুলো তৈরি করার পদ্ধতিই হল অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট। যারা এসব অ্যাপ তৈরি করেন তাদের বলা হয় অ্যাপ ডেভেলাপার।

আমরা জানি যে, গুগল প্লে স্টোরে কিংবা Apple এর App Store এ প্রচুর পরিমাণে অ্যাপ রয়েছে। যখন আমাদের ফোনের জন্য কোন অ্যাপস প্রয়োজন হয় তখন আমরা এসব প্লাটফরমে সার্চ করে তা ডাউনলোড দিয়ে ব্যবহার করি। দুটি স্টোর মিলিয়ে অ্যাপের সংখ্যা ৬.৬৩ মিলিয়নেরও বেশি। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বাড়ছে আর তার সাথে বাড়ছে অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদা। আর তাই আপনি যদি ভালো একজন অ্যাপ ডেভলপার হতে পারেন তবে আপনি অ্যাপ বানিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা ইনকাম করতে পারেন অনায়াসেই।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৬.৯২ বিলিয়ন মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৮৫% এর মতো। হয়তো আর কিছুদিন পর আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে স্মার্টফোন দেখবো। তাই স্মার্টফোন এর সাথে সাথে বাড়ছে স্মার্টফোনের অ্যাপস এর সংখ্যাও। তাই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য স্মার্টফোন অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট খুবই কার্যকরী একটি স্কিল।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ইতিহাস

১৯৯৭ সালে নোকিয়া ৬৬১০ মডেলের ফোন এ একটি সাপের গেম ছিল যেটিকে প্রথম মোবাইল অ্যাপ হিসাবে ধরা হয়। তবে মোবাইল অ্যাপস তৈরির ধারণা পাওয়া যায় তারও আগে ১৯৮০ সালের দিকে। তবে স্মার্টফোনের অ্যাপ তৈরির প্রথম যে টার্নিং পয়েন্ট দেখা গিয়েছে সেটি ছিল ২০০৭ সালের স্টিভ জবস এর হাত ধরে যখন অ্যাপল তাদের প্রথম আইফোন বাজারে আনলো এবং তার মধ্যে অ্যাপ স্টোর নিয়ে আসলো।

২০১২ সালের ৬ মার্চ গুগল যখন তাদের নিজস্ব অ্যাপ স্টোর যাকে আমরা গুগল প্লে স্টোর নামে চিনে থাকি সেটি লঞ্চ করলো তারপর থেকে ধীরে ধীরে এখন পর্যন্ত ৬.৬৩ মিলিয়নেরও বেশি অ্যাপ এই দুইটি স্টোর এ রয়েছে এবং প্রতিদিন আরো অনেক নতুন নতুন অ্যাপ এই দুইটি স্টোরে যোগ হচ্ছে। তাই সবাই এখন অ্যাপ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়াতে অ্যাপ তৈরির চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদাও।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ধাপসমূহ

১.নতুন আইডিয়া বের করা : প্রতিটা অ্যাপ নতুন নতুন চিন্তাভাবনা বা ধারণা থেকে আসে তাই প্রথমে কোনো অ্যাপ তৈরি করতে হলে আপনাকে তার জন্য চিন্তা করতে হবে যে কীভাবে আপনি সুন্দরভাবে একটি অ্যাপ বানাতে পারেন। যখন আপনি নতুন আইডিয়া বের করার জন্য অনেক বেশি চিন্তা করতে থাকবেন তখন আপনি কখনো না কখনো একটি ভালো আইডিয়া বের করতে পারবেন অ্যাপ বানানোর জন্য।

২.প্ল্যান ও ডিজাইন: একটি অ্যাপ তৈরি করার জন্য আপনাকে প্ল্যান করতে হবে যে কীভাবে আপনি ওই অ্যাপটি তৈরি করতে পারেন বা অ্যাপটিতে কি কি জিনিস থাকবে সেটি ভেবে রাখবেন তারপর আপনি সে অনুযায়ী অ্যাপের জন্য (UI) এবং (UX) ডিজাইন করতে হবে।

৩.ডেভেলপমেন্ট : আপনি যখন অ্যাপ বানানোর কাজ করবেন তখন আপনাকে অ্যাপের জন্য কোডিং করতে হবে যার মাধ্যমে আপনার অ্যাপের সবকিছু তৈরি হবে যার সাহায্যে আপনি অ্যাপটি আরো ভালোভাবে তৈরি করতে পারেন। আপনি জাভা , C++, জাভা স্ক্রিপ্ট , পাইথন এই সমস্ত কোডিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করতে পারেন।

৪.মেইনটেন্যান্স ও আপডেট : আপনি একটি অ্যাপ তৈরি করে ফেললেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। প্রতিটি অ্যাপ রেগুলার ভিত্তিতে আপডেট করতে হয় কেননা যদি ভালো আপডেট দিতে না পারেন তবে আপনি নিজের অ্যাপস এ অনেক বেশি অডিয়েন্স নিয়ে আসতে পারবেন না।

৫.টেস্ট করা : আপনি যখন একটি অ্যাপ তৈরি করবেন তখন আপনাকে সেটি টেস্ট করে দেখতে হবে যে আপনার অ্যাপটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে আপনাকে আবার সেটি ঠিক করে দিতে হবে।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের বর্তমান চাহিদা

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের বর্তমানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে কেননা বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৮৫% মানুষ স্মার্টফোনে ব্যবহার করে। আর তাই এই স্মার্টফোনের জন্য প্রচুর অ্যাপের দরকার হয় তাই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অ্যাপ বানানোর দরকার পড়ছে। তাছাড়া যারা স্মার্টফোন ইউজার রয়েছে তাদের সবারই ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট রয়েছে যেমন তরুণ তরুণীরা কেউ কেউ স্মার্টফোনে গেম খেলে কেউ আবার ছবি তুলতে ভালোবাসে কেউ চ্যাটিং করে থাকে, কেউবা অনেক বেশি গান শুনতে ভালোবাসে তাদের কথা মাথায় রেখে অ্যাপ ডেভলপাররা বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন নতুন নতুন ফিচার সমৃদ্ধ অ্যাপ বাজারে নিয়ে আসছে বর্তমান সময়ে।

বর্তমান সময়ে অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদা তাই প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বর্তমানে অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মার্কেট ভ্যালু ২০৬.৮৫ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। যার ফলে অ্যাপ তৈরির কাজটি করে আপনি বর্তমান সময়ে খুবই ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে বর্তমানে অনেক ফ্রিল্যান্সার এই কাজটা করে বিভিন্ন অ্যাপ বানিয়ে দিয়ে ক্লায়েন্টদের থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে।তাই অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট আপনি যদি ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে চান তাহলে সেটি আপনার জন্য একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের চ্যালেঞ্জসমূহ

১.সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি : যেহেতু একজন মানুষ তার পার্সোনাল ফোন এ এই সমস্ত অ্যাপগুলো ব্যবহার করে থাকে তাই একজন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অনেকগুলো তথ্য অ্যাপের মধ্যে থাকে তাই অ্যাপটির নিরাপত্তা যদি ভালো না হয় তবে একজন ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে চিন্তার মধ্যে থাকে কারণ ব্যক্তিগত কোনো তথ্য যদি হ্যাকারদের বা খারাপ কোনো হাতে পড়ে যায় তবে তারা ব্যবহারকারীর এই সমস্ত তথ্য দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করতে পারবে। তাই যেকোনো অ্যাপ ব্যবহার করার পূর্বে তার সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি সম্পর্কে জেনে নেয়া ভালো। এবং একজন ডেভেলপার তার অ্যাপটি সম্পূর্ণ সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি দিয়ে তৈরি করা জরুরি।

২.প্রতিযোগিতা : আপনি গুগল প্লে স্টোরে অথবা অ্যাপ স্টোরে এ যদি গেমস লিখে সার্চ করেন তখন দেখবেন প্রচুর পরিমাণে অ্যাপ সেখানে রয়েছে তারমানে একটি অ্যাপ শুধু বানালেই হবে না আপনাকে দেখতে হবে আপনি যে টাইপের অ্যাপটি তৈরি করছেন আপনার প্রতিযোগীরা সেই অ্যাপটি কীভাবে তৈরি করছে আপনাকে আপনার অ্যাপটিতে তাদের থেকেও বেশি ভ্যালু অ্যাড করার চেষ্টা করতে হবে নাহলে আপনি আপনার প্রতিযোগীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন না। এটি একজন অ্যাপ ডেভেলপারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

৩.মনিটাইজেশন : আপনার অ্যাপটি কি ফ্রি হবে নাকি সেখানে অনেক ধরনের জিনিস অ্যাপের মধ্য থেকে ব্যবহারকারীকে কিনে নিতে হবে সেটি ঠিক করাও একজন ডেভেলপারের জন্য চ্যালেঞ্জ।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ

আপনি যদি ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অ্যাপ ডেভেলপার হতে চান তবে সেটি যে আপনার জন্য কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নয় সেটি আমরা পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারি। ২০৩০ সালে অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মার্কেট সাইজ হবে ৫৬৭.১৯ বিলিয়ন ডলার যা ভবিষ্যতে আপনার অ্যাপ ডেভেলপার হতে চাওয়ার পিছনে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।

তাছাড়া মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল হওয়াতে আজকে যে সমস্ত অ্যাপ চলছে ভবিষ্যতে তা নাও চলার সম্ভাবনাই বেশি কেননা আজ থেকে ৫-৭ বছর আগে যে অ্যাপগুলো চলতো তা কিন্তু এখন আর চলে না তাই বোঝাই যায় যে ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকবে এবং অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদাও বাড়তে থাকবে তাই ভবিষ্যতের জন্য এটি খুবই সময়োপযোগী একটি স্কিল। যার মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে ভবিষ্যতে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন কেননা মার্কেটপ্লেসগুলোতে এই কাজের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সার কথা

অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট হলো ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য খুবই ভালো একটি স্কিল। আপনি যদি ধৈর্য দিয়ে, পরিশ্রম করে কাজটি শিখতে পারেন তবে তা দিয়েই আপনি নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। তাই আপনার যদি অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট শেখার মতো ইচ্ছাশক্তি ও মানসিকতা থাকে তবে শুরু করে দিতে পারেন যা আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দুটির জন্যই কাজে লাগবে।

আপনার কোন অ্যাপ ডেভেলাপমেন্টের প্র্রযেক্ট থাকলে বা অ্যাপ ডেভেলাপমেন্ট শিখতে চাইলে এই আইডিতে যোগাযোগ করুন – ফেইসবুক
হোয়াটসঅ্যাপ – WhatsApp
ওয়েবসাইট – www.mernstacks.com

আরও কিছু খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *